স্বদেশ ডেস্ক:
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বেশ ঘাম ঝরাতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। কোনোভাবেই তাদের নির্বাচন থেকে সরানো যাচ্ছে না। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত দলটি। গেল শুক্রবার দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিদ্রোহীদের নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। জানা গেছে, বিএনপি জোট বিহীন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কোনোভাবেই ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে বেশকিছু উপজেলায় বহিষ্কারও করা হয়েছে। এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছেন তাদের বিষয়েও কঠোর হচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি কিংবা নেতা হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত কেউ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হতে পারে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাদের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্ট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। চলমান ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়। এ সময় বিভিন্ন জেলায় প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্যই সঙ্ঘাত এবং এতে প্রভাবশালীরা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কিছু নেতা ও মন্ত্রী-এমপির পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় তারা নৌকার প্রার্থীদের বিরোধিতা করছেন। দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এত উন্নয়নের পরও অনেক জায়গায় দলের মনোনীত প্রার্থীরা পরাজিত হচ্ছেন। বিষয়টি কঠোর হস্তে দমন করা প্রয়োজন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করার জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব দেন। স্থানীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপি কার কী ভূমিকা তা লিখিত আকারে জমা দিতে নির্দেশনা দেন তিনি। যারা নৌকার বিরুদ্ধে যাবে, বিদ্রোহীদের মদদ দেবে তাদের সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনারও নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান। অবশ্য শুরু থেকেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিল দলটি।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিয়েছে, তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। মন্ত্রী হোক, এমপি হোক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে আমাদের আগে যে অবস্থান ছিল এখনো সেই অবস্থান বহাল রয়েছে। তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় বহিষ্কারও করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের যারা মদদ দিচ্ছে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে আফজাল হোসেন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের তালিকা করার বিষয়টি চলমান রয়েছে। শিগগিরই তালিকা সম্পন্ন করে জমা দেয়া হবে।
এর আগে গত ২১ জুন প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১২০টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত ২৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আর ৪৯টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রথম ধাপের দ্বিতীয় অংশের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৩ জন এবং ভোটে ৭৬ জনসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত ১১৯ জন প্রার্থী জয়লাভ করেন। মনোনয়নের বাইরে আওয়ামী লীগের ২৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভের খবর পাওয়া গেছে। আগামী ২৮ নভেম্বর ১ হাজার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি চলছে।